কম্পিউটার কি? কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে জেনে বিসিএস কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের উত্তর দিন সহজেই। বিগত সালের পরীক্ষাগুলোতে কম্পিউটার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এসেছিল। তাই আপনারা যারা এ বছর বিসিএস কিংবা চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য নিয়মিত পড়াশোনা করছেন তারা কম্পিউটার সম্পর্কে সকল খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জেনে রাখতে পারেন। আজকের আর্টিকেলটি কম্পিউটার কি? কম্পিউটার কত প্রকারও কি কি এই বিষয় নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাই আজকের পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার হচ্ছে একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা খুব দ্রুত ও নির্ভুলভাবে বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক ও যৌগিক সমস্যা সমাধান করতে পারে। কম্পিউটার শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ Computare থেকে। অনেক বিজ্ঞানীদের মতে, কম্পিউটার শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Compute’ থেকে এসেছে। ল্যাটিন শব্দ Computare ও গ্রীক শব্দ Compute এই দুই শব্দের বাংলা অর্থ হলো গণনাকারী বা হিসাবকারী যন্ত্র। কম্পিউটার আবিষ্কারের শুরুর দিকে শুধুমাত্র গণনার কাজ করা গেলেও, বর্তমান সময়ে আধুনিক কম্পিউটারগুলো দিয়ে বিভিন্ন রকমের কাজ করা যায় ও বিভিন্ন গানিতিক সমস্যার সমাধান করা যায়।
কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?
বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে প্রায় সকল কাজ করার জন্য কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই আপনারা যারা এ বছর বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা অবশ্যই কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কে জেনে রাখতে পারেন। গঠন ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার তিন প্রকারের হয়ে থাকে; সেগুলো হলোঃ এনালগ কম্পিউটার, ডিজিটাল কম্পিউটার , ও হাইব্রিড কম্পিউটার। নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
১। এনালগ কম্পিউটার
এনালগ কম্পিউটার হলো এমন এক ধরনের কম্পিউটার যা কোনো কম্পিউটিং সমস্যাকে ভৌত বৈশিষ্ট্য যেমনঃ ইলেকট্রিক, যান্ত্রিক, বা হাইড্রলিক-এর ভৌত এবং চলমান পরিমাপে মডেল হিসেবে রূপ দেয়া হয়। অপরদিকে, ডিজিটাল কম্পিউটার-এ সমস্যাটিকে ধাপবিশিষ্ট সংখ্যায় মডেল প্রদান করা হয়।
২। ডিজিটাল কম্পিউটার
যে সমস্ত কম্পিউটার বাইনারি পদ্ধতিতে অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্রিয়া সম্পন্ন করে, সেসব কম্পিউটারকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলা হয়। দ্রুত গতিতে গণনা এবং যৌক্তিক ক্রিয়াকলাপ সহ বেশ কয়েক ধরনের কাজ করা যায়। তাছাড়াও উচ্চ গতির ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করার জন্য এই ধরণের যন্ত্রগুলো মেমোরি সম্পন্ন ডিস্ক, ইনপুট, ও আউটপুট ইউনিট দিয়ে ডিজাইন করা হয়। আকার-আয়তন ও ব্যহারের ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটার ৪ প্রকারের হয়ে থাকে তাহলোঃ সুপার কম্পিউটার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার, মিনি কম্পিউটার, ও মাইক্রো কম্পিউটার। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
সুপার কম্পিউটার
অধিক শক্তিশালী ও দ্রুততম কম্পিউটার হলো সুপার কম্পিউটার। এই সুপার কম্পিউটারের মাধ্যেমে অনেক জটিল এবং সূক্ষ্ম কাজ খুব সহজে সম্পাদন করা যায়। আকার এবং কাজের ক্ষমতার দিক থেকে সুপার কম্পিউটারটি বিশ্বের বৃহত্তম কম্পিউটার। এই কম্পিউটারগুলি দিয়ে মহাকাশ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মহাকাশযান, যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত করা হয়। কয়েকটি সুপার কম্পিউটার হলো- CRAY 1, Supers Xll, JAGUAR, NEBULAE, ROADRUNNER, KRAKEN, JUGENE, PLEIADES, TIANHE-1, ও Sunway Taihulight ইত্যাদি।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
সুপার কম্পিউটার থেকে সামান্যতম কম শক্তিশালী হলো মেইনফ্রেম কম্পিউটার। তবে, সাধারণ কম্পিউটার থেকে মেইনফ্রেম কম্পিউটার আকারে বড় এবং অধিক শক্তিশালী। সাধারণ ব্যাংকিং বা ব্যবসায়িক কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠানে তথ্য আদান-প্রদান, সংরক্ষণ এবং গবেষণা কাজে এই মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কয়েকটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার হলো- IBM 370, IBM 9100, ও IBM 4341 ইত্যাদি।
মিনি কম্পিউটার
সাধারণ কম্পিউটারের চেয়ে আকারে বড় কম্পিউটার হলো এই মিনি কম্পিউটার। এই কম্পিউটারে টার্মিনাল লাগিয়ে একসাথে প্রায় ৫০ জন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারে। সাধারনতঃ এই কম্পিউটার গুলো শিল্প-বাণিজ্য ও গবেষণা কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কয়েকটি মিনি কম্পিউটার হলো IBMS/36, PDP-11, ও NCRS/9290 ইত্যাদি।
মাইক্রো কম্পিউটার
যে সমস্ত কম্পিউটার দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা হয় সেগুলোই মূলত মাইক্রো কম্পিউটার। মাইক্রো মানে হচ্ছে ক্ষুদ্র বা ছোট। মাইক্রো কম্পিউটারের অন্য আরেকটি নাম হলো পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি। মাইক্রো কম্পিউটারে মাদারবোর্ড, প্রসেসর, র্যাম, রম, হার্ডডিস্ক, সিডি ড্রাইভ সহ অনেক কিছু থাকে। মাইক্রো কম্পিউটারকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথাক্রমেঃ ডেস্কটপ বা পার্সোনাল কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ কম্পিউটার। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
- ডেস্কটপ বা পার্সোনাল কম্পিউটার: যে সমস্ত কম্পিউটার টেবিলের উপর রেখে ব্যবহার করা হয় তাকেই ডেস্কটপ কম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটার বলা হয়। মাদারবোর্ড, প্রসেসর, র্যাম, রম, মনিটর ইত্যাদি নিয়ে ডেস্কটপ কম্পিউটার তৈরি হয়। ব্যক্তি কাজে ব্যবহার করার জন্য ডেস্কটপ কম্পিউটার বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় প্রায় সকল ব্যবহারকারী ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকে। কয়েকটি ডেস্কটপ কম্পিউটার হলো- আইবিএমের পিসি, এ্যপলের মেকিনটোস, কমোডোর এমিগা ইত্যাদি ।
- ল্যাপটপ কম্পিউটার: যে সমস্ত কম্পিউটার কোলের উপর রেখে ব্যবহার করা যায় তাকে মূলত ল্যাপটপ কম্পিউটার বলা হয়। তাছাড়া খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে বহন করা যায়। ল্যাপটপের বড় সুবিধা হলো, এতে ব্যাটারি থাকায় বিদ্যুৎ না থাকালেও দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা যায়। কয়েকটি ল্যাপটপের মডেল হলো ইন্টেল কোর আই ৩ ল্যাপটপ, ইন্টেল কোর আই ৫ ল্যাপটপ, ইন্টেল কোর আই ৭ ল্যাপটপ, গেমিং ল্যাপটপ, এইচপি প্রোবুক ল্যাপটপ, এইচপি প্যাভিলিয়ন ল্যাপটপ, ও এইচপি এলিটবুক ল্যাপটপ।
৩। হাইব্রিড কম্পিউটার
হাইব্রিড কম্পিউটার বলতে এমন এক ধরনের কম্পিউটার বোঝায় যা, এনালগ এবং ডিজিটাল কম্পিউটারগুলির সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যগুলিকে একত্রিত করে। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এটি বলা যেতে পারে যে, হাইব্রিড কম্পিউটার প্রযুক্তি এবং মৌলিক দিকগুলির ক্ষেত্রে এনালগ এবং ডিজিটাল কম্পিউটারের একটি আংশিক সংমিশ্রণ।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
কম্পিউটার কি? কম্পিউটার কত প্রকার এই বিষয়ে আপনার মনে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?
গঠন ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার প্রধানত তিন প্রকার। যথাঃ এনালগ কম্পিউটার, ডিজিটাল কম্পিউটার ও হাইব্রিড কম্পিউটার। অন্যদিকে ডিজিটাল কম্পিউটার আবার ৪ প্রকার। যথাঃ সুপার কম্পিউটার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার, মিনি কম্পিউটার, এবং মাইক্রো কম্পিউটার।
কম্পিউটারে কি কি রয়েছে?
কম্পিউটারে প্রধানত ৪ টি মূল অংশ রয়েছে। আর সেগুলো হলো- ইনপুট, আউটপুট, মেমোরি, ও প্রসেসর।
উপসংহার
বিসিএস কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কম্পিউটার সম্পর্কে পড়ে রাখা প্রয়োজন। বিগত সালের পরীক্ষাগুলোতে কম্পিউটার সম্পর্কিত বিষয় থেকে অনেকগুলো প্রশ্ন এসেছে। তাই আগে থেকেই আপনাকে কম্পিউটার কি? কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি এ বিষয়ে পড়ে রাখা উচিত। এছাড়াও বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রস্ততি আরও বেশী শক্তিশালী করতে কম্পিউটার সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“কম্পিউটার কি? কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে, তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!
Leave a Reply