ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান জেনে আপনি বিসিএস কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির প্রস্তুতি দৃঢ় করতে পারেন। কেননা বিগত সালের পরীক্ষাগুলোতে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন পরীক্ষায় এসেছে। তাই আপনারা যারা এ বছর বিসিএস পরীক্ষার জন্য নিয়মিত পড়াশোনা করছেন তারা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখতে পারেন। আজকের এই আর্টিকেলটি ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সাজানো হয়েছে। তাই আপনি অবশ্যই আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়বেন।
ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য
ভাষা আন্দোলন বা রাষ্ট্রভাষা দিবস নামে পরিচিত বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস। ১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার লক্ষ্যে যারা শহীদ হয় তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই জাতীয় দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় বাংলা ভাষাভাষী ৪ কোটি ৪০ লাখ জনগণ পাকিস্তান অধিরাজ্যের অংশ হয়ে যায়। পাকিস্তানের সরকার, প্রসাশন, সামরিক বাহিনীতে পাকিস্তানের পশ্চিম প্রান্তের আধিপত্য দেখা দিতে থাকে। করাচিতে জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে শুধুমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা এবং স্কুল ও মিডিয়াতে ব্যবহার করার প্রস্তাব করা হয়। সাথে সাথেই এসময় পূর্ব পাকিস্তানে এর প্রতিবাদ দেখা দেয়। আর এভাবেই বাংলা ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
বিসিএস কিংবা অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় ভাষা আন্দোলন সমন্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন আসতে পারে তাই আপনার এই বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান পড়ে রাখা প্রয়োজন। তাই আপনারা যারা এ বছর বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান জেনে পরীক্ষার প্রস্তুতি আরও বেশী শক্তিশালী করতে পারেন। নিচে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন ও উত্তরগুলো তুলে ধরা হলো-
ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নাম কী?
উত্তর: খাজা নাজিমউদ্দীন ।
১৯৫২ সালে পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর: নুরুল আমিন।
ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন?
উত্তর: মালিক গোলাম মোহাম্মদ।
‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ এই উক্তিটি কে করেছেন?
উত্তর: মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে কখন প্রথম ধর্মঘট হয়?
উত্তর: ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে।
সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক কে ছিলেন?
উত্তর: কাজী গোলাম মাহবুব।
কত সালে গঠিত “হয় সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বা কমিটি?
উত্তর: ৩০ জানুয়ারি ১৯৫২ সালে।
আকরাম খান শিক্ষা কমিটি গঠিত হয় কতজন সদস্যের সমন্বয়ে ?
উত্তর: ১৭ জন।
‘পূর্ববাংলা ভাষা কমিটি’ এর সভাপতি কে ছিলেন ভাষা আন্দোলনের সময় ?
উত্তর: আকরাম খাঁ।
কোন সংস্থা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?
উত্তর: তমদ্দুন মজলিশ।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রথম কোন সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: তমদ্দুন মজলিশ ।
ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান ‘তমদ্দুন মজলিশ কার নেতৃত্বে গঠিত হয়?
উত্তর: অধ্যাপক আবুল কাসেম।
কত সালে “তমদ্দুন মজলিশ” প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ১৯৪৭ সালে।
তমদ্দুন মজলিশ ছিল কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল?
উত্তর: একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।
রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন অঙ্কুরিত হয় ১৯৪৭ সালে, মহীরুহে পরিণত হয় কবে?
উত্তর: ১৯৫২ সালে ।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি কী ছিল—?
উত্তর: ভাষা ও সংস্কৃতি।
পূর্ব বাংলায় ভাষা আন্দোলন হয়েছিল কিসের ভিত্তিতে?
উত্তর: বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
প্রথম পর্যায়ে ভাষা আন্দোলনের পূর্ব বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর: খাজা নাজিমউদ্দীন।
পাকিস্তানে কত শতাংশ মানুষ বাংলাভাষী ছিল?
উত্তর: ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলাভাষী ছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক রচিত ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ তে কারাগারে অনশনরত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গীর নাম কী?
উত্তর: মহিউদ্দিন আহমদ।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা কত তারিখ ছিল?
উত্তর: ৮ ফাল্গুন।
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি কী বার ছিল?
উত্তর: বৃহস্পতিবার ছিল।
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি প্রথম শহিদের নাম কী?
উত্তর: রফিক।
ভাষা আন্দোলনে শহিদ আবুল বরকতের ডাক নাম কী ছিল?
উত্তর: আবাই।
ভাষা শহিদদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কে ছিলেন?
উত্তর: আবুল বরকত।
১৯৫২ সালের তৎকালীন ভাষা আন্দোলন কিসের জন্ম দিয়েছিল?
উত্তর: এক নতুন জাতীয় চেতনার ।
কত সালে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহিদ দিবস পালিত হয়?
উত্তর: ১৯৫৩ সালে।
বাংলা ভাষাকে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় কত সালে?
উত্তর: ১৯৫৬ সালে।
ভাষা আন্দোলনের ফলে কোন প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টি হয়?
উত্তর: বাংলা একাডেমি।
বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক কী?
উত্তর: বাংলা একাডেমি।
বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয় কত সালে?
উত্তর: ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৫ সালে।
বাংলা একাডেমির প্রথম মহাপরিচালকের নাম কি ছিল?
উত্তর: অধ্যাপক মযহারুল ইসলাম ।
বাংলা একাডেমির প্রথম নারী মহাপরিচালকের নাম কী?
উত্তর: ড. নীলিমা ইব্রাহিম।
বাংলা একাডেমির মূল ভবনের নাম কী ছিল?
উত্তর: বর্ধমান হাউস।
কার নামে বাংলা একাডেমির মূল মিলনায়তনটি?
উত্তর: আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ।
নজরুল মঞ্চ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: বাংলা একাডেমিতে।
একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজক সংস্থার নাম কী?
উত্তর: বাংলা একাডেমি।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা’ চালু হয় কত সালে?
উত্তর: ১৯৭৮ সালে।
বাংলা একাডেমি কত সালে হীরক জয়ন্তী উদযাপন করেছিল?
উত্তর: ২০১৫ সালে।
অমর একুশে ভাস্কর্যটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ।
বাংলাদেশের বাইরে বিশ্বের প্রথম কোন দেশে মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয় কোথায়?
উত্তর: সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
১৯৫২ সালের কত তারিখে প্রথম শহীদ স্মৃতি স্তম্ভটি তৈরি করা হয়?
উত্তর: ২৩ ফেব্রুয়ারি ।
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কে উন্মোচন করেন?
উত্তর: শহীদ বরকতের মা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্থপতি কে করেন?
উত্তর: হামিদুর রহমান।
বাংলাদেশের বাইরে কোন দেশে প্রথম শহীদ মিনার স্থাপিত হয়?
উত্তর: যুক্তরাজ্য
বাংলাদেশের বাহিরে কোন মুসলিম দেশে সর্বপ্রথম শহিদ মিনার নির্মিত হয়?
উত্তর: ওমানে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তারিখ কোনটি?
উত্তর: ২১ ফেব্রুয়ারি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্দেশ্য কি ছিল-?
উত্তর: ভাষা অধিকার।
২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা?
উত্তর: ইউনেস্কো।
২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় কত সালে কত তারিখে?
উত্তর: ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে।
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে কত সাল থেকে?
উত্তর: ২০০০ সালে।
বাংলাদেশ সরকার ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ পাস করে?
উত্তর: ১৯৮৭ সালে ।
কোন দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে করা হয়েছে?
উত্তর: সিয়েরা লিয়ন।
ভারতের কোন রাজ্যে বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে?
উত্তর : ঝাড়খন্ড।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় কত সালে?
উত্তর: ২০০১ সালে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তবে তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি — এই গানটি কে রচনা করেন?
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি — এই গানটি রচনা করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
“মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা” — এই গানের রচয়িতার নাম কী?
“মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা” — এই গানের রচয়িতা হল অতুল প্রসাদ সেন।
উপসংহার
ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। কেননা বিগত সালের পরীক্ষাগুলোতে ভাষা আন্দোলন সমন্ধে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন পরীক্ষায় এসেছে। আপনারা যারা এ বছর বিসিএস কিংবা অন্যান্য চাকরির পরীক্ষা দিবেন তারা ভাষা আন্দোলন সমন্ধে জেনে পরীক্ষার প্রস্তুতি একধাপ এগিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে আপনি ভাষা আন্দোলনের পটভূমি এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
“ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্টটি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
Leave a Reply