৬ দফা গুলো কি কি এই সমন্ধে জেনে আপনি বিসিএস কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি দৃঢ় করতে পারেন। বিগত সালের পরীক্ষার প্রশ্নগুলোতে ছয় দফা কর্মসূচি সম্পর্কিত অনেক প্রশ্ন পরীক্ষায় এসেছে। তাই আপনারা যারা এ বছর বিসিএস কিংবা চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা ছয় দফা গুলো কি কি তা জেনে রাখতে পারেন। আজকের এই পোস্টটি ছয় দফা গুলো কি কি এই বিষয় নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাই আপনি আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ছয় দফা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য
বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা হলো ছয় দফা। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন। । ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিল- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র, ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেল রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ তারিখে ঐতিহাসিক ছয় দফা অনানুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়। ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে একে ম্যাগনাকার্টা বা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদও বলা হয়।
৬ দফা গুলো কি কি?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঐতিহাসিক ছয় দফার ভূমিকা ছিল অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এই ছয় দফা কর্মসূচির মাধ্যেমে বাঙ্গালি জাতি পূর্ণতা পেয়েছে। তাই আমাদের প্রত্যকের ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচী জেনে রাখা প্রয়োজন। আপনারা যারা এবছর চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন তারা ছয় দফা গুলো কি কি এই সমন্ধে পড়ে জেনে রাখতে পারেন। নিচে ৬ দফা গুলো কি কি তা উল্লেখ করা হলো-
প্রথম দফাঃ শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তান রাষ্ট্র-কে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে; যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠন করা থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে।
দ্বিতীয় দফাঃ কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা থাকবে কেবল মাত্র দুইটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে বাধাহীন।
তৃতীয় দফাঃ মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
এই দফায় মূলত দেশের মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে দুইটি বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
- সারা দেশের জন্যে দু’টি আলাদা আলাদা, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে।
- বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, সারা দেশের জন্য শুধুমাত্র একটি মুদ্রা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ করার জন্য শাসন ব্যবস্থায় একটি কার্যকর ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্যও একটি পৃথক রিজার্ভ ব্যাংক তৈরি করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি পৃথক আর্থিক বা মুদ্রানীতি চালু করতে হবে।
চতুর্থ দফাঃ রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
আঞ্চলিক সরকারের হাতে সকল ধরনের ট্যাক্স,খাজনা ও কর ধার্য এবং আদায়ের ক্ষমতা থাকবে। আঞ্চলিক সরকারের আদায়কৃত একটি নির্দিষ্ট অংশ সাথে সাথেই ফেডারেল তহবিলে জমা হবে। শাসনতন্ত্রে এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাংক সমূহ এর বিধান কার্যকর থাকবে।
পঞ্চম দফাঃ বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা
বৈদেশিক মুদ্রা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রদেশগুলোর হাতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা কার্যকর থাকবে। বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্যের ব্যাপারে প্রদেশগুলো যুক্তিযুক্ত হারে যুক্তরাষ্ট্র জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা চাহিদা মিটাবে।
ষষ্ঠ দফাঃ আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা
আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র প্রতি রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
৬ দফা গুলো কি কি এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্নের উত্তর।
ছয় দফা আনুষ্ঠানিকভাবে কত তারিখে ঘোষণা করা হয়?
১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি প্রথম কোথায় উত্থাপন করা হয়?
ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি প্রথম “লাহোরে” উত্থাপন করা হয়।
উপসংহার
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক ছয় দফার গুরুত্ব অনেক বেশী। তাই একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ছয় দফা সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। এতক্ষণে আমরা ৬ দফা গুলো কি কি এই সমন্ধে জেনে নিলাম। তাছাড়াও আপনারা যারা এ বছর বিসিএস কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রস্ততি নিচ্ছেন তারা ৬ দফা গুলো কি কি তা জেনে পরীক্ষার প্রস্তুতি আরও বেশী শক্তিশালী করতে পারেন। এছাড়াও চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ভাষা আন্দোলনের পটভূমি পড়ে জেনে রাখতে পারেন।
“৬ দফা গুলো কি কি?” এ বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!
৬ দফা সহজে মনে রাখার কৌশলঃ শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাবলে মুদ্রা, রাজস্ব, বৈদেশিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের প্রয়োজন।