কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ কয়টি ও কি কি এই বিষয়ে জেনে আপনি সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষা কিংবা বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি স্বরূপ জেনে রাখতে পারেন। বিগত সালে পরীক্ষাগুলোতে কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন এসেছে। তাই আপনারা যারা এবছর বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন তারা কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ কয়টি ও কি কি এই সমন্ধে জেনে পরীক্ষার প্রস্তুতি আরও বেশী দৃঢ করতে পারবেন। আজকের আর্টিকেল-টি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাই এই আর্টিকেল-টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
কাব্য গ্রন্থ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য
কাব্যগ্রন্থ হলো এক বা একাধিক কবিতার সংকলন, যাদের মধ্যে একটি কমন থিম থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। কাব্য বা কবিতা এমন এক ধরনের সাহিত্য যা নান্দনিক এবং অনেকাংশে ছন্দময় ভাষার গুণাবলিকে ব্যবহার করে। ভাষায় অর্থকে আরও প্রাণবন্ত করার জন্য সংযোজন, বা এর জায়গায়, একটি প্রসায়িক দৃশ্যমান অর্থকে প্রকাশ করে। এই নীতিকে কাজে লাগিয়ে একজন কবির লেখা একটি কবিতা হয় একটি সাহিত্যিক রচনা।
কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ কয়টি ও কি কি?
কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ২৩টি। বিসিএস কিংবা অন্যন্য সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে প্রতিবছর ২-১টি প্রশ্ন কমন পড়েই থাকে। তাই আপনারা যারা এ বছর বিসিএস কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ কয়টি জেনে পরীক্ষার প্রস্তুতি আরও বেশী দৃঢ় করতে পারেন। নিচে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থগুলোকে তালিকা আকারে তুলে ধরা হল এবং কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
কাব্যগ্রন্থের নাম | প্রকাশকাল |
---|---|
অগ্নিবীণা | ১৯২২ সাল |
সাম্যবাদী | ১৯২৫ সাল |
ঝিঙে ফুল | ১৯২৬ সাল |
সিন্ধু হিন্দোল | ১৯২৮ সাল |
চক্রবাক | ১৯২৯ সাল |
নতুন চাঁদ | ১৯৪৫ সাল |
মরুভাস্কর | ১৯৫১ সাল |
দোলন-চাঁপা | ১৯২৩ সাল |
বিষের বাঁশি | ১৯২৪ সাল |
ভাঙ্গার গান | ১৯২৪ সাল |
চিত্তনামা | ১৯২৫ সাল |
ছায়ানট | ১৯২৫ সাল |
পুবের হাওয়া | ১৯২৬ সাল |
সর্বহারা | ১৯২৬ সাল |
ফণী-মনসা | ১৯২৭ সাল |
সঞ্চিতা | ১৯২৮ সাল |
জিঞ্জীর | ১৯২৮ সাল |
সন্ধ্যা | ১৯২৯ সাল |
প্রলয় শিখা | ১৯৩০ সাল |
নির্ঝর | ১৯৩৯ সাল |
সঞ্চয়ন | ১৯৫৫ সাল |
ঝড় | ১৯৬১ সাল |
নজরুল ইসলাম: ইসলামী কবিতা | ১৯৮২ সাল |
১। অগ্নিবীণা (১৯২২)
বাঙ্গালী জনপ্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলো অগ্নিবীণা। ১৯২২ সালের ২৫শে অক্টোবর তারিখে অগ্নিবীণা (কার্তিক ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত হয়েছিল। এই গ্রন্থে মোট ১২ টি কবিতা রয়েছে।
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের কবিতা সমূহ-
- প্রলয়োল্লাস
- বিদ্রোহী
- রক্তাম্বর-ধারিণী মা
- আগমণী
- ধূমকেতু
- কামাল পাশা
- আনোয়ার
- রণভেরী
- শাত-ইল-আরব
- খেয়াপারের তরণী
- কোরবানী’ ও মোহররম
২। দোলন-চাঁপা(১৯২৩)
বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ হলো দোলনচাঁপা। এটি ১৯২৩ সালের অক্টোবর মাসে (আশ্বিন ১৩৩০ বঙ্গাব্দ) প্রথম সংস্করণ এই কাব্যগ্রন্থে ১৯টি কবিতা ছিল। সূচিপত্রের আগে মুখবন্ধরূপে সংযোজিত কবিতা “আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে” ১৩৩০ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) জ্যৈষ্ঠ মাসের কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। দোলন-চাঁপা কাব্যগ্রন্থের পরবর্তী সংস্করণে ৫০ টি কবিতা সংকলিত হয়।
প্রথম সংস্করণের কবিতাসমূহ-
দোলন-চাঁপা কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে ১৯টি কবিতা ছিল, সেগুলো হলো :
- দোদুল দুল
- বেলাশেষে
- পউষ
- পথহারা
- ব্যথা গরব
- উপেক্ষিত
- সমর্পণ
- পুবের চাতক
- অবেলার ডাক
- চপল-সাথী
- পূজারিণী
- অভিশাপ
- আশান্বিতা
- পিছু-ডাক
- মুখরা
- সাধের ভিখারিণী
- কবি-রাণী
- আশা
- শেষ প্রার্থনা
পরবর্তী সংস্করণের কবিতা সমূহ-
- পউষ
- পথহারা
- অবেলার ডাক
- পূজারিণী
- অভিশাপ
- পিছু-ডাক
- কবি-রাণী কবিতাগুলি বাদ দিয়ে হংসদূতী
- সে যে চাতকই জানে
- লাল নটের ক্ষেতে
- মদালস ময়ূর-বীণা কার বাজে গান
- না মিটিতে সাধ মোর বেণুকা
- তোমার ফুলের মত মন, বরষা
- ঐ নীল গগনের নয়ন-পাতায়
- মাত্লা-হাওয়া, সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়
- বনমালি
- বেদনা-অভিমান
- নিশীথ-প্রতিম
- অ-বেলায়
- হার-মানা-হার
- বেদনা-মণি
- পরণ-পূজা
- অনাদৃতা
- নীলপরী
- হে-ভীতু
- অকরুণপিয়া
- মরমী
- মুক্তি-বার
- বিরাগিনী
- হারামণি
- প্রিয়ার রূপ
- পাপড়ি-খোলা
- বিধুরা পথিক
- প্রিয়া
- প্রতিবেশিনী
- বাদল-দিনে
- মনের মানুষ
- কার বাঁশি বাজিল
- দহনমালা
- দুপুর-অভিসার
- শেষের গান
- রৌদ্র-দগ্ধের গান
- আলতা-স্মৃতি
৩। সাম্যবাদী [ ১৯২৫ ]
মানুষের সমতা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ। এটি ১৯২৫ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখে (পৌষ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ) কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই কাব্যগ্রন্থে মোট ১১ টি কবিতা রয়েছে।
সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থের কবিতা সমূহ-
- সাম্যবাদী
- ঈশ্বর
- মানুষ
- পাপ
- চোর-ডাকাত
- বারাঙ্গনা
- মিথ্যাবাদী
- নারী
- রাজা-প্রজা
- সাম্য
- কুলিমজুর
৪। ঝিঙে ফুল [ ১৯২৬ ]
ছোটদের জন্য লেখা কবিতা নিয়ে নজরুল রচিত কাব্যগ্রন্থ হলো ‘ঝিঙে ফুল’ । বইটিতে মোট ১৪ টি কবিতা রয়েছে ।
ঝিঙে ফুল কাব্যগ্রন্থের কবিতা সমূহ-
- খাঁদু-দাদু
- খুকি ও কাঠবেড়ালি
- খোকার খুশি
- খোকার গপ্প বলা
- খোকার বুদ্ধি
- চিঠি
- ঝিঙে ফুল
- ঠ্যাং-ফুলি
- দিদির বে-তে খোকা
- পিলে-পটকা
- প্রভাতি
- মা
- লিচু চোর
- হোঁদলকুতকুতের বিজ্ঞাপন
৫। সিন্ধু হিন্দোল [ ১৯২৮ ]
কাজী নজরুল ইসলামের রচিত কাব্যগ্রন্থ হলো সিন্ধু হিন্দোল। এটি ১৯২৮ সালে (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ) এই কাব্যগ্রন্থে মোট ১৯টি কবিতা রয়েছে।
সিন্ধু হিন্দোল কাব্যগ্রন্থের কবিতা সমূহ-
- সিন্ধুঃ প্রথম তরঙ্গ
- সিন্ধুঃ দ্বিতীয় তরঙ্গ
- সিন্ধুঃ তৃতীয় তরঙ্গ
- গোপন প্রিয়া
- অনামিকা
- বিদায় স্মরণে
- পথের স্মৃতি
- উন্মনা
- অতল পথের যাত্রী
- দারিদ্র্য
- বাসন্তি
- ফাল্গুনী
- মঙ্গলাচরণ
- বধু-বরণ
- অভিযান
- রাখী-বন্ধন
- চাঁদনী-রাতে
- মাধবী-প্রলাপ
- দ্বারে বাজে ঝঞ্জার জিঞ্জির
৬। চক্রবাক [ ১৯২৯ ]
এই কাব্যগ্রন্থে নজরুল বেদনার ছবি তুুুলে ধরেছেন; এতে রয়েছে প্রেমের অনুুুভূতি এবং অতীত সুুখের স্মৃতিচারণা। এটি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ এই গ্রন্থে মোট ১৯ টি কবিতা রয়েছে।
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থের কবিতা সমূহ-
- তোমারে পড়িছে মনে
- বাদল-রাতের পাখি
- স্তব্ধ রাতে
- বাতায়ন-পাশে গুবাক-তরুর সারি
- কর্ণফুলী
- শীতের সিন্ধু
- পথচারী
- মিলন-মোহনায়
- গানের আড়াল
- তুমি মরে ভুলিয়াছ
- হিংসাতুর
- বর্ষা-বিদায়
- সাজিয়াছি বর মৃত্যুর উৎসবে
- অপরাধ শুধু মনে থাক
- আড়াল
- নদীপারের মেয়ে
- ১৪০০ সাল
- চক্রবাক
- কুহেলিকা
৭। নতুন চাঁদ [ ১৯৪৫ ]
কাজী নজরুল ইসলামের রচিত কাব্যগ্রন্থ হলো নতুন চাঁদ। এটি ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে (চৈত্র ১৩৫১ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত হয়েছিল। এতে রয়েছে নজরুল ইসলামের ১৯টি কবিতা।
নতুন চাঁদের কাব্যগ্রন্থের কবিতা সমূহ-
- নতুন চাঁদ
- চির-জনমের প্রিয়া
- আমার কবিতা তুমি
- নিরুক্ত
- সে যে আমি
- অভেদম্
- অভয় সুন্দর
- অশ্রু-পুস্পাঞ্জলী
- কিশোর রবি
- কেন জাগাইলি তোরা
- দুর্বার যৌবন
- আর কতদিন
- ওঠ রে চাষী
- মোবারকবাদ
- কৃষকের ঈদ
- চাষীর ঈদ
- আজাদ
- ঈদের চাঁদ
- চাঁদনী রাতে
৮। মরুভাস্কর [ ১৯৫১ ]
হযরত মোহাম্মদ সঃ এর জীবনী নিয়ে চারটি সর্গে ১৮ টি খণ্ড-কবিতা নিয়ে রচিত হয়েছে এই কাব্যগ্রন্থ । এটি ১৯৫১ সালে (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ ) প্রকাশিত হয়েছিল।
মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থের কবিতা সমূহ-
- অবতরণিকা
- অনাগত
- অভ্যূদয়
- স্বপ্ন
- আলো-আঁধারি
- দাদা
- পরভৃত
- শৈশব-লীলা
- প্রত্যাবর্তন
- “সাক্কুস সাদ্র” (হৃদয় উন্মোচন)
- সর্বহারা
- কৈশোর
- সত্যাগ্রহী মোহাম্মদ
- শাদী মোবারক
- খদিজা
- সম্প্রদান
- নও কাবা
- সাম্যবাদী
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ কয়টি ও কি কি এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্নের উত্তর।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কি?
কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম হলো অগ্নিবীণা। এটি ১৯২২ সালের ২৫শে অক্টোবর তারিখে অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই গ্রন্থে মোট ১২ টি কবিতা রয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম রচিত সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ কোনটি?
কাজী নজরুল ইসলাম রচিত সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ হলো “নির্ঝর”। এটি ২৩শে জানুয়ারি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ (মাঘ ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ ) এই গ্রন্থে মোট কবিতার সংখ্যা ২৫টি।
উপসংহার
কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ সমন্ধে আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। বিসিএস কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রস্ততির জন্য কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ কয়টি ও কি কি জেনে রাখা প্রয়োজন। তাই আগে থেকেই আপনাকে নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ জেনে রাখা অত্যাবাশক। এছাড়াও বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার প্রস্ততি আরও শক্তিশালী করতে চাইলে আপনি পৃথিবীতে মুসলিম দেশ কয়টি ও কি কি? পড়তে পারেন।
“কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ কয়টি ও কি কি” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।
Leave a Reply