বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর?

Bengalis Are Mixed Race

সর্বশেষ আপডেটঃ

/

ক্যাটাগরিঃ

,

বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর? প্রশ্নটি প্রায়ই বিসিএস কিংবা সরকারি-বেসকারি চাকরির লিখিত পরীক্ষার আসে। এছাড়াও বিসিএস কিংবা অন্যন্য চাকরির প্রিলিমিনারী টেস্ট পরীক্ষায় বাঙালি একটি সংকর জাতি বিষয় থেকে MCQ প্রশ্নও পড়ে। তাই আপনারা যারা এ বছর বিসিএস এবং অন্যান্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রতিদিন পড়াশোনা করছেন তারা বাঙালি সংকর জাতি সমন্ধে পড়ে জেনে রাখতে পারেন। আজকের এই পোস্টটি বাঙালি একটি সংকর জাতি এই বিষয় নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাই আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।

বাঙালি সংকর জাতি কেন? 

বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির সমন্বয়ে যে জাতি গোষ্ঠির উদ্ভব হয় তাকে সংকর জাতি বলা হয়। বাঙ্গালি একটি সংকর জাতি বলা হয় কারণ বাঙ্গালি এক বা একক কোন জাতি গোষ্ঠি নয়। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির সমন্বয়ে বাঙ্গালি জাতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই বাঙ্গালি জাতিকে একটি সংকর জাতি বলা হয়। 

বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর?

বিভিন্ন চাকরির কিংবা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য বাঙালি সংকর জাতি এ সম্পর্কে পড়ে রাখা প্রয়োজন। কেননা বিগত সালের পরীক্ষাগুলোতে বাঙালি সংকর জাতি এই বিষয়ে থেকে প্রশ্ন এসেছে। তাই আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতিকে একধাপ এগিয়ে নিতে বাঙালি একটি সংকর জাতি এ সম্পর্কে পড়ে রাখতে পারেন। নিচে বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর? প্রশ্নের উত্তরটি সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হলো- 

বাঙ্গালি এক বা একক কোন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী নয়। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জনগোষ্ঠির মিশ্রণ-বিরোধ ও সমন্বয়ের মাধ্যেমে বাঙ্গালি জাতিগোষ্ঠি তৈরি হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের জাতিগত পরিচয় নির্ধারণ করতে যারা নিরলসভাবে কাজ করেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন স্যার হার্বার্ট রিজলি, পন্ডিত র বিরজশঙ্কর গুহ, রামপ্রসাদ চন্দ্র সহ আরও অনেকেই। পন্ডিত বা বিশেষজ্ঞদের মত হলো, বাঙ্গালি জাতি হলো নতুন একটি মিশ্র জাতি। ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশে প্রথম যে জনগোষ্ঠি বসবাস শুরু করে তারা হলো নিগ্রোয়েড বা অস্ট্রেলয়েড শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ধীরে ধীরে এদের সাথে যুক্ত হয়েছে দ্রাবিড়, আলপিয়ান, মঙ্গলয়েড, নর্ডিক, আরবীয় সহ আরও বহু জাতি। আর্যরা বাংলায় আসে খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকের আগেই। এরপর মিশ্রণ অব্যহত থাকে। অনেকগুলো জাতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠেছে এই বাঙ্গালি জাতি। এর মূল কাঠামো সৃষ্টির কাল বা প্রাগহৈতিহাসিক যুগ থেকে মুসলিম অধিকারের পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। 

১। দ্রাবিড়

নাক চওড়া, মাথা লম্বা, ও উন্নত চুল কালো ও বাদামি। গায়ের রং কালো থেকে বাদামি। ঠোট প্রুরু, উচ্চতা খাটো মুখ গহব্বর বড় আকৃতির, মুখাবয়ব তীক্ষ্ণ ও স্পষ্ট। সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টা দ্রাবিড় ভাষাভাষী আলপাইন গোত্রের এই নরগোষ্ঠী মূলত ভূ-মধ্যসাগরীয়। 

২। মঙ্গলয়েড 

চোখের পাতা সামনের দিকে ঝোলানো, গায়ের রঙ পীতাভ থেকে বাদামী, চুলের রং কালো ও ঋজু, মাথার আকৃতি গোল। এই জনগোষ্ঠি দক্ষিণ-পশ্চিম চীন থেকে এই অঞ্চলে এসেছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে এদের মূল বসবাস। 

৩। আর্য বা ককেশীয় জনগোষ্ঠি 

প্রটো অস্ট্রেলয়েডদের পর ককেশীয়রা এদেশে প্রবেশ করে তাই এদেরকে আর্য বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে, বাংলাদেশের জনপ্রকৃতিতে আর্য ভাষাভাষী একটি ধারা এসে প্রভাবিত করে। আর্যরা দ্রাবিড় ভেড্ডিদের পদানত করে ভারতবর্ষে বর্ণপ্রথার জন্ম দেন। শরীরের গড়ন বলিষ্ঠ, মাথার আকৃতি লম্বা এবং সরু নাক আর্যদের প্রধান লক্ষণ।

৪। নেগ্রেটো 

গায়ের রঙ কৃষ্ণবর্ণ, খর্বাকৃতি, বেঁটে, ঠোঁট প্রুরু এবং নাক অতি চ্যাপ্টা কৃতির। এই নেগ্রেটো জাতিগোষ্ঠি বাংলা জনগোষ্ঠির প্রথম স্তর। সুন্দরবন, যশোরের বাশঝোড়, ময়মনসিংহ এবং নিম্নবঙ্গের জনগণের মধ্যে এর প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।

৫। অস্ট্রিক বা অস্ট্রোলয়েড 

নাক চওড়া, গায়ের রঙ মিশমিশে কালো, মাথার গড়ন লম্বাকৃতি, দেহের গড়ন বেঁটে কিংবা মধ্যকার। এরা অনেক সময় ডেভিড কিংবা নিষাদ নামেও পরিচিত। বাঙ্গালি জাতির মধ্যে অস্ট্রিক বা অস্ট্রোলয়েড জাতির প্রভাব সবচেয়ে বেশী। ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৫ থেকে ৬ বছর আগে এরা এ অঞ্চলে বসবাস করার জন্য আসে। সাঁওতাল, কোল, মুন্ডা, ভূমিজ, মালপাহাড়ি, বাউরি, চন্ডাল সহ আরও অনেক জাতির সাথে অস্ট্রিক জনগোষ্ঠির সম্পর্ক রয়েছে। কুড়ি, পণ, চন্ডাল, প্রভৃতি হিসাব, চোঙ্গা, দা, লাউ, লেবু প্রভৃতি এসব অস্ট্রিক ভাষার শব্দ। 

৬। আরব জাতি 

সপ্তম ও অষ্টম শতকের সময়ে আরব জাতিরা বাংলায় আগমন করে। পরবর্তী সময়ে আফগান, তুর্কি, হাবশি, ইরানি, মোগল মুসলমানেরা এ বাংলা বসতি স্থাপন করে বাংলায় বসবাস শুরু করেন। 

৭। ইউরোপীয় জাতি 

ইউরোপীয় জাতি ১৬ শতকের সময়ে বাংলায় আগমন করে বাঙ্গালি জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরপরে বাংলায় ইংরেজরা আগমন করে। 

৮। আলপাইন জাতি 

দ্রাবিড়দের পরে ভারতে আলপাইন জাতি প্রবেশ করে। বাঙ্গালি, গুজরাটি, মারাঠি, ওড়িশি জাতি পূর্ব পূরূষদের মধ্য অনেকেই আলপাইন জাতিগোষ্ঠির লোক ছিল। আলপাইনদের কোন কালে দল রাঢ়, সুক্ষ্ণ, বঙ্গ, পুন্ড এসব অঞ্চলে বসতি স্থাপন শুরু করেন। এরা বিহার উড়িষ্যা হয়ে কাশী এবং পূর্ব আসামের কামরূপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এদের থেকে আজ আমরা বাঙ্গালি জাতিতে পরিণত হয়েছি। 

৯। আর্য ও পরবর্তী ধারা 

আর্য জাতি ছাড়াও এই দেশে অনেক জাতি প্রবেশ করে বসতি স্থাপন করে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাদের সংমিশ্রণেও বাঙ্গালি জাতি গঠনে সহয়তা করে। পারস্যের তুর্কীস্তান থেকে সাবা জাতির লোকেরা এই দেশে আসে। এদেশে আসার পর তারা ভারতের পূর্বাঞ্চলে ও বাংলায় বসতি স্থাপন করেন।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙ্গালি জাতির উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-মতামত থাকলেও বাঙ্গালি জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক তত্ত্ব পাওয়া যায়নি। বর্তমান বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির মধ্য আর্থ-সামাজিক, পারিবারিক জীবনযাত্রা, আচার-অনুষ্ঠান সবকিছুর মধ্যেই একই ধরনের পরিলক্ষিত হয়। তাই বাঙ্গালি জাতি একটি সংকর জাতি।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্নের উত্তর-

আরব জাতিরা কখন বাংলায় আগমন করে?

আরব জাতিরা সপ্তম ও অষ্টম শতকের সময়ে বাংলায় আগমন করে। 

নেগ্রেটো জাতিগোষ্ঠির দেহের গড়ন কেমন?

নেগ্রেটো জাতিগোষ্ঠির দেহের গড়ন গায়ের রঙ কৃষ্ণবর্ণ, খর্বাকৃতি, বেঁটে, ঠোঁট পুরু এবং নাক অতি চ্যাপ্টাকৃতির। 

ইউরোপীয় জাতিরা কখন বাংলায় আগমন করে?

ইউরোপীয় জাতিরা ১৬ শতকের সময়ে বাংলায় আগমন করে। 

উপসংহার

উপরোক্ত আলোচনায় “বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর?” এর সঠিক উত্তর জানলাম। বিসিএস পরীক্ষা কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্ততির জন্য বাঙালি সংকর জাতি এই সমন্ধে পড়ে রাখা প্রয়োজন। বিগত সালের পরীক্ষাগুলোতে বাঙালি সংকর জাতি সমন্ধে থেকে অনেকগুলো প্রশ্ন এসেছে। তাই আগে থেকেই আপনার বাঙালি সংকর জাতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান রাখা উচিত। এছাড়াও বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রস্ততি শক্তিশালী করতে চাইলে আপনি দ্বিজাতি তত্ত্ব কি? দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর? এই সম্পর্কে জেনে রাখতে পারেন।   

“বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর” এ বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে, তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *