লালসালু উপন্যাসের MCQ পড়ে স্কুল-কলেজ কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর দিন সজই। বিগত সালের উচ্চ মাধ্যমিক এবং চাকরির পরীক্ষাগুলোতে লালসালু উপন্যাস থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বহু নির্বাচনী প্রশ্ন এসেছে। তাই আপনারা যারা এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য নিয়মিত পড়াশোনা করছেন তারা লালসালু উপন্যাস সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে রাখতে পারেন। আজকের এই পোস্টটিতে লালসালু উপন্যাসের MCQ নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
লালসালু উপন্যাসের পটভূমি
লালসালু হচ্ছে এক ধরনের সামাজিক উপন্যাস। যুগ যুগ ধরে কিংবা বছরের পর বছর সময় ধরে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মীয় ভীতি এই উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য বিষয়। মজিদ নামে এক স্বার্থান্বেষী ও ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীকে কেন্দ্র করে এর মূল কাহিনী গড়ে উঠেছে। সার্থান্বেষণে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে অবশেষে সে মহব্বতনগর গ্রামে ঘাঁটি গাড়ে মাতব্বর খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে। সেই গ্রামের বাঁশঝাড় সংলগ্ন ছিল একটি পরিচয়বিহীন কবর। এরপর মজিদ প্রচার করতে শুরু করে কবরটি ‘মোদাচ্ছের’ (নাম না জানা) পীরের এবং স্বপ্নাদেশে মাজারের তদারকির জন্যই এ গ্রামে তার আগমন ঘটেছে। গ্রামবাসী তার স্বপ্নের বিবরণ শুনে ভীত হয় এবং একইসাথে বিশ্বাস করে। তারপর তারা কবরটি পরিষ্কার করে এবং কবরটির উপর লালসালু দিয়ে ঢেকে দেয় এবং কবরটিকে মাজারে পরিণত করে তোলে। আর মজিদ হয় সেই মাজারের খাদেম। এইভাবে নিজেকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন বলে প্রচারের মাধ্যমে গ্রামের প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তিতে পরিণত হন।
লালসালু উপন্যাসের লেখক পরিচিতি
লালসালু উপন্যাসের রচিয়তা হলেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তিনি ১৯২২ সালের ১৫ই আগস্ট তারিখে চট্টগ্রাম জেলার ষোল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল নোয়াখালীতে। তার পিতার নাম সৈয়দ আহমদউল্লাহ। তিনি ছিলেন উচপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে পিতার কর্মস্থলে ওয়ালীউল্লাহের শৈশব, কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত হয়। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনকে নানাভাবে দেখার সুযোগ হয়। অল্প বয়সে তিনি মাতৃহীন হয়ে যায়। তিনি ১৯৪১ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই এ (IA) এবং ১৯৪৩ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ (BA) পাশ করেন। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এম এ (MA) পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু ডিগ্রি নেওয়ার আগেই ১৯৪৫ সালে তার পিতার মৃত্যু হলে তিনি বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক দি স্টেটম্যান এর সাব এডিটর হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর পরবর্তীতে জীবনে তিনি অনেক কর্মস্থলে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্য তিনি পাকিস্থান সরকারের চাকরি থেকে অব্যহতি নেন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের আগেই ১৯৭১ সালের ১০ই অক্টোবর তারিখে প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের সাহিত্যকর্ম সমগ্র বাংলা সাহিত্যের বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। ব্যক্তি ও সমাজের ভেতর ও বাইরের সুক্ষ্ণ ও গভীর রহস্যর উদ্ঘাটনের বিরল কৃতিত্ব তার। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গল্প উপন্যাসে একদিকে যেমন স্থান পেয়েছে কুসংস্কার ও অন্ধ ধর্ম বিশ্বাসে আচ্ছন্ন, বিপর্যস্ত, আশাহীন ও মৃতপ্রায় সমাজ জীবন, অন্যদিকে ঠিক তেমনই স্থান পেয়েছে মনের ভেতরকার লোভ, প্রতারণা, ভীতি, ঈর্ষা প্রভৃতি প্রবৃত্তির ক্রিয়া-পতিক্রিয়া।
লালসালু উপন্যাসের MCQ সমূহ
এইচএসসি পরীক্ষা ও চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি সরূপ “লালসালু” এ উপন্যাস থেকে MCQ পড়ে রাখা প্রয়োজন। আপনারা যারা এ বছর স্কুল-কলেজ কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন তারা “লালসালু উপন্যাস” থেকে বহু নির্বাচনী প্রশ্ন-উত্তরগুলো জেনে রাখতে পারেন। নিচে লালসালু উপন্যাসের MCQ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো দেখে নিন-
মজিদের পেশা কি ছিল?
উত্তর: কবর ব্যবসা বা মাজার ব্যবসা।
কার কথা শুনলে পুরুষ মেয়ে মানুষও অধম হয়ে যায়?
উত্তর: বিবির।
মজিদের মহব্বতনগর গ্রামের প্রবেশটা কেমন ছিল?
উত্তর: নাটকীয়।
‘মাজারটি তার শক্তির মূল’ বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বিশ্বাস বোঝানো হয়েছে।
বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক আন্তর্জাতিক মানে উনড়বীত করার পথিকৃৎ এর নাম কী?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্।
উপন্যাসের প্রধান ভিত্তি কী?
উত্তর: প্লট।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বিভিন্ন অঞ্চলে কীসের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে?
উত্তর: জীবনধারা।
মজিদ কার চোখে ভয় দেখেছে?
উত্তর: রহিমার।
‘তোমার দাড়ি কই মিঞা?’–এই উক্তিটি কার?
উত্তর: মজিদের।
বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ-কার ছিল?
উত্তর: মজিদের।
লালসালু উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম কী?
উত্তর: মজিদ।
নিরাক-পড়া এক মধ্যাহ্নে গ্রামে আগত মজিদ আশ্রয় গ্রহণ করে কার বাড়িতে?
উত্তর: খালেক ব্যাপারীর।
জমিলা কিসের প্রতিনিধি?
উত্তর: নারীধর্ম, হৃদয়ধর্ম ও সজীবতার।
শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের কী বেশি।
উত্তর: আগাছা বেশী।
লালসালু উপন্যাসে “মন থেকে থেকে খাবি খায়” বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: অস্থিরতা।
লালসালু উপন্যাসে “মনিদের দেশে” বলতে কোন স্থান-কে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: সিলেট।
মজিদ কোন সড়কে প্রথম মোনাজাতের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল?
উত্তর: মতিগঞ্জ।
মজিদ হাসুনির মাকে কী রঙের শাড়ি কিনে দেয়?
উত্তর: বেগুনি রঙের।
আওয়ালপুরের পীরের পুরোনো মুরিদ কে ছিল?
উত্তর: ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট।
মজিদের মন কেন থম থম করে?
উত্তর: আওয়ালপুরের পীরের আগমনের জন্য।
আক্কাসের বাবার নাম কী?
উত্তর: মোদাব্বের মিঞা।
কী প্রতিষ্ঠার জন্য আক্কাস উদ্যোগ নেয়?
উত্তর: স্কুল বা বিদ্যালয়।
মজিদের মুখে জমিলার থুতু নিক্ষেপ করায় কোন বিষয়টি প্রকাশ করে?
উত্তর: ক্ষোভ।
লালসালু উপন্যাসের প্রকাশকের নাম কী-?
উত্তর: মুহাম্মদ আতাউল্লাহ।
লালসালু উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় কত সালে?
উত্তর: ১৯৬০ সালে।
লালসালু উপন্যাসের উর্দু অনুবাদক করেন কে?
উত্তর: কলিমুল্লাহ।
লালসালু উপন্যাসের ফরাসি অনুবাদ প্রকাশ হয় কবে?
উত্তর: ১৯৬১ সালে।
লালসালু উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদক কে ছিল?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
লালসালু উপন্যাসটি কোন ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি?
উত্তর: হিন্দি ভাষায়।
“নলি” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: জাহাজে চড়ার অনুমতিপত্র।
“সরগলা কেরাত” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: চিকন সুরে কোরাআন পাঠ করা।
“সালু” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: এক রকম লাল সুতি কাপড়।
“বেওয়া” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: বিধবা।
“মারুফ” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: মহাপুরুষ।
“রদ্দি” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: পচা বা ব বাসি।
“লোটা” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ঘটি।
এলেম শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: জ্ঞানী।
“হুড়কা” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: দরজার খিল।
লালসালু উপন্যাসের প্রধান উপাদান কী?
উত্তর: সমাজ বাস্তবতা।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ প্যারিসে কোন বিভাগে চাকরি করতেন?
উত্তর: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ে।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কত সালে জন্মগ্রহণ করেন-?
উত্তর: ১৯২২ সালে।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের পৈতৃক নিবাস ছিল কোন জেলায়?
উত্তর: নোয়াখালী জেলায়।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন-?
উত্তর: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কর্ম জীবন শুরু করেন কোন পেশার মাধ্যেমে?
উত্তর: সাংবাদিকতা।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের বাবার নাম কী-?
উত্তর: সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কত সালে মারা যান?
উত্তর: ১৯৭১ সালে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
লালসালু উপন্যাসের MCQ এই বিষয় নিয়ে আপনার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তবে তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সমস্ত সকল প্রশ্নের উত্তর-
মহব্বত নগরের লোকটির নাম কী?
মহব্বত নগরের লোকটির নাম “মজিদ”।
আমেনা বিবির প্রতি মজিদের কি ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে?
আমেনা বিবির প্রতি মজিদের যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো লালসা।
উপসংহার
এইচ এস সি পরীক্ষায় কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রস্ততির জন্য লালসালু উপন্যাস থেকে MCQ পড়ে মুখস্থ রাখা প্রয়োজন। বিগত সালের পরীক্ষাগুলোতে লালসালু উপন্যাস থেকে অনেকগুলো বহু নির্বাচনী প্রশ্ন এসেছে। তাই আগে থেকেই আপনাকে লালসালু উপন্যাসের MCQ পড়ে মুখস্থ রাখা প্রয়োজন। এছাড়াও বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রস্ততি আরও বেশী শক্তিশালী করতে বায়ান্নর দিনগুলো MCQ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“লালসালু উপন্যাসের MCQ” এ বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে, তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!
Leave a Reply