অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল

Non-Cooperation Movement

সর্বশেষ আপডেটঃ

/

ক্যাটাগরিঃ

,

অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল পড়ে আপনি বিসিএস কিংবা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি আরও বেশী দৃঢ় করতে পারেন। কেননা বিগত সালের পরীক্ষাগুলোতে  অসহযোগ আন্দোলন বিষয় থেকে কয়েকটি প্রশ্ন এসেছিল। তাই আপনারা যারা এ বছর বিসিএস পরীক্ষার জন্য নিয়মিত পড়াশোনা করছেন তারা এই  অসহযোগ আন্দোলনের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখতে পারেন। আজকের এই আর্টিকেলটি  অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাই আপনি অবশ্যই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

অসহযোগ আন্দোলন কি?

ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতবাসী মহাত্মা গান্ধী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ভারতব্যাপী যে আন্দোলন শুরু করেছিল তাই ইতিহাসের পাতায় অসহযোগ আন্দোলন নাম পরিচিত। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই অসহযোগ আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে গান্ধী যুগ এর বিকাশ ঘটায়। এই আন্দোলের মাধ্যমে ভারতীয়গণ ব্যাপকভাবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

অসহযোগ আন্দোলনের কারণ সমূহ

ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতবাসী মহাত্মা গান্ধী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে যে আন্দোলন শুরু করেছিল তাই অসহযোগ আন্দোলন নাম পরিচিত। ভারতব্যাপী এই অসহযোগ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। নিচে অসহযোগ আন্দোলন কারণগুলো তুলে ধরা হল-

১। স্বায়ত্তশাসন অর্জনে ব্যর্থতা

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরুর সময়ে  ব্রিটিশ সরকার ভারতের সকল জনগণকে স্বায়ত্তশাসন দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাই প্রবল আশা নিয়ে ভারতবাসী ব্রিটিশের পক্ষে যুদ্ধ তহবিল গঠনের উদ্দ্যেশ্য ছয় কোটি একুশ লক্ষ পাউন্ড চাঁদা দিয়েছিল। তাছাড়াও প্রায় সাড়ে বারো (১২.৫) লক্ষ ভারতীয় সেনা ইংরেজদের হয়ে বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়। কিন্তু যুদ্ধশেষে ব্রিটিশ তার স্বায়ত্বশাসন দানের প্রতিশ্রুতি অমান্য করে ফেলে। তাই আশাহত ভারতবাসী আন্দোলনের পথে যায়। 

২। অর্থনৈতিক সংক্রান্ত সমস্যা 

যুদ্ধ বিগ্রহ কারণে ভারতের সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু সেই অনুপাতে কৃষক-শ্রমিকসহ সাধারণ ভারতবাসীর আয় না বাড়ায় তারা সমস্যায় পড়ে। এই অর্থনৈতিক সমস্যার মুক্তির জন্য ভারতবাসীগণ আন্দোলনে সাড়া দেয়।

৩। রাওলাট আইন

ব্রিটিশ ভারতবাসীর ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য কুখ্যাত রাওলাট আইন পাস করানো হয়। এই রওলাট আইনে বলা হয় যে, কোনো ভারতীয়কে সন্দেহের বশে বিনা পরওয়ানায় গ্রেপ্তার বা বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা যাবে। এই আইন ভারতবাসী অনেক ক্ষুব্দ হয়েছিল। 

৪। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড 

রওলাট আইন ভারতবাসী মেনে নিতে পারে নি। তাই ভারতবাসী রওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য পাঞ্জাবের অমৃতসর জেলার জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যানে এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ডাকা হয়।  এই সমাবেশে উপস্থিত জনতার ওপর ডায়ারের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনারা নিষ্ঠুরভাবে গুলি চালায়। এতে করে অনেক ভারতীয় নারী, পুরুষ, ও বৃদ্ধ সহ অনেকের মৃত্যু হয়। 

অসহযোগ আন্দোলনের ফলাফল সমূহ

ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতবাসী মহাত্মা গান্ধী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে যে আন্দোলন শুরু করেছিল তাই অসহযোগ আন্দোলন নাম পরিচিত। অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতে অনেক ভালো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। নিচে অসহযোগ আন্দোলন ফলাফলগুলো তুলে ধরা হল-

১। গান্ধিজির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা 

অহিংস পথে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ফলে জাতীয় রাজনীতিতে গান্ধিজির প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেকগুন বৃদ্ধি পায়। জাতির নেতা হিসেবে গান্ধিজি সারা ভারতে পরিচিতি পান। অসহযোগ আন্দোলনের ফলাফল সমূহের মধ্য গান্ধিজির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা অন্যতম। 

২। রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ

অসহযোগ আন্দোলনে ভারতীয় রাজনীতিকে অনেক গভীরভাবে প্রভাবিত করে। অসহযোগ আন্দোলন ভারতবাসীর রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটাতে অনেকটাই সাহায্য করেছিল। ভারতের রাজনৈতিক বিকাশ এখান থেকেই শুরু হয়েছিল। 

৩। কংগ্রেসের প্রভাববৃদ্ধি পায় 

অসহযোগ আন্দোলন ভারতীয় জাতীয় দল হিসেবে কংগ্রেসের মর্যাদাকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই আন্দোলনের পর থেকে সুদূর গ্রামগুলিতেও জাতীয় কংগ্রেসের শাখা-প্রশাখা গড়ে উঠতে শুরু করে। ফলে কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকে। অসহযোগ আন্দোলনের ফলে কংগ্রেসের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

৪। আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি

অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে খাদ্য, বস্ত্র, ও শিল্পসহ বিভিন্ন দেশীয় সকল শিল্পের প্রসার ঘটতে থাকে। এই আন্দোলনে সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগ দেওয়ায় জাতপাতের ভেদ রেখা অনেক হারে মুছে যায়। এই আন্দোলনের ভালো দিক হিসেবে বেশ কিছু দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠে। এ  সময় থেকে শিক্ষার হার বাড়তে থাকে। সমাজের সকল স্তরের মানুষ অনেক উন্নত হয়। অসহযোগ আন্দোলনের পর থেকে ভারতবাসী আর্থিক ও সামাজিকভাবে লাভবান হতে শুরু করে। 

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তবে তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর।

অসহযোগ আন্দোলনে কোন আইন পাস করা হয়? 

অসহযোগ আন্দোলনে ভারতবাসীদের কোনঠাসা করে রাখতে ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন পাস করেন। 

রাওলাট আইন কবে পাশ হয়? 

রাওলাট আইন ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ তারিখে পাশ হয়। 

রাওলাট আইনের অপর নাম কি ছিল?

রাওলাট আইনের অপর নাম কালো আইন। 

উপসংহার

অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। কেননা বিগত সালের পরীক্ষাগুলোতে অসহযোগ আন্দোলন সমন্ধে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এসেছে। তাই আপনারা যারা এ বছর বিসিএস কিংবা অন্যান্য চাকরির পরীক্ষা দিবেন তারা অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি একধাপ এগিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি দৃঢ় করতে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। 

“অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্টটি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *